Premtali Degree College

প্রতিষ্ঠানের ইতিহাস ও বর্তমান অবস্থা

প্রেমতলী একটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত ও ঐতিহাসিক স্থান, যা পদ্মা নদীর তীরে অবস্থিত।

১৯৬৬ সালে জনগণের মনে উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে এখানে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়। সেই সময়ে গোদাগাড়ী থানায় কোনো উচ্চমাধ্যমিক কলেজ ছিল না। এ অঞ্চলের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে একটি এ্যাডহক কমিটি গঠন করে কলেজ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়। কলেজ প্রতিষ্ঠার প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন জনাব মোঃ সিরাজুল ইসলাম , সাবেক এমপিএ। তাঁকে সম্পাদক পদে মনোনীত করা হয়। 

১৯৬৭ সালের আগস্ট মাসে প্রেমতলী সুকবাসিয়া উচ্চ বিদ্যালয় ভবনে কলেজের প্রথম ক্লাস শুরু হয়। অতঃপর ১৯৬৯ সালের ৩০শে ডিসেম্বর বর্তমান কলেজ ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন রাজশাহী ডেপুটি কমিশনার জনাব কে. এ. জামান, সি.এস.পি। ১৯৭০ সালে কলেজটিতে বিজ্ঞান বিভাগ খোলা হয় এবং ১৯৭২ সালে এটি ডিগ্রি পর্যায়ে উন্নীত হয়। মানবিক, বাণিজ্য ও বিজ্ঞান বিভাগের সমন্বয়ে এটি একটি পূর্ণাঙ্গ ডিগ্রি কলেজে পরিণত হয়।

ভারতের সালার থেকে আগত জনাব আব্দুল জাব্বার  (এম.এ ইংরেজি) কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন এবং ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। পিরিজপুর নিবাসী জনাব এস. এম জহরুল ইসলাম ১৯৭১-১৯৭২ সাল পর্যন্ত অর্থনীতি বিষয়ে শিক্ষকতা করেন। পরবর্তীতে তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের  সচিব হিসেবে ২০০৯ সালে অবসর গ্রহন করেন। অত্র কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষক, জনাব সাইফুল ইসলাম দুই দফায় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মহিশালবাড়ি নিবাসী অধ্যাপক মুজিবুর রহমান ১৯৮১ সালে ইংরেজি শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তীতে ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে তিনি রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসন থেকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং বর্তমানে দলটির কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

কলেজটির কৃতি শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় তাঁদের কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন রাজশাহী  বিশ্ববিদ্যালয়ে  তথ্য ও যোগাযোগ  প্রযুক্তি  বিভাগে অধ্যাপক  ড. ফিরোজ আহমেদ; রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক, ড. মোঃ সাইদ আখতার: পিরিজপুর নিবাসী জনাব আবু তৈয়ব যিনি তথ্য মন্ত্রণালয়ের পরিচালক ও কলকাতায় বাংলাদেশ হাইকমিশনে দায়িত্ব পালন করেছেন; জনাব মোঃ মেহতাজুল হক, এমএসসি, উইং কমান্ডার, বাংলাদেশ বিমান বাহিনী; জনাব এএফএম মাহবুবুল হক,জেলা জজ ও বিচারক ঢাকা স্পেশাল নারী ও শিশু আদালত; জনাব মোঃ মতিউর রহমান, যিনি জেলা দুর্নীতি দমন কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন; এবং ড.মোঃ মাসাদুজ্জামান, সহকারী অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, নন্দনগাছি ডিগ্রি কলেজ।

বর্তমানে কলেজটি ৫.৭০ একর জায়গার উপর অবস্থিত। এর মধ্যে একটি দুইতলা ভবন ও একটি তিনতলা ভবন ০.৫০ একর জমি জুড়ে রয়েছে। কলেজের খেলার মাঠ ২.০০ একর, ফল বাগান ১.০০ একর, কলেজ পুকুর ২.১৪ একর, অধ্যক্ষের বাসভবন .০৬ একর এবং একটি পুরাতন ছাত্রাবাস.১৫ একর জায়গার উপর অবস্থিত। এছাড়াও একটি নতুন চারতলা ভবন নির্মাণাধীন রয়েছে। কলেজের সামনে একটি সুসজ্জিত শহীদ মিনার ও ফুল বাগান অবস্থিত। প্রেমতলী ডিগ্রী কলেজ “গ্রীন ক্যাম্পাস” হিসেবে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রধানমন্ত্রী জাতীয় পুরস্কার ২০২৩-এ ‘ক’ শ্রেণিতে দ্বিতীয় পুরস্কার লাভ করেছে। এটি প্রতিষ্ঠানটির পরিবেশবান্ধব কর্মকাণ্ড ও টেকসই উন্নয়নের প্রতি অঙ্গীকারের এক অনন্য স্বীকৃতি।

কলেজটিতে বর্তমানে এইচএসসি পর্যায়ে ৩৮৫ জন এবং ডিগ্রি পাস পর্যায়ে ২৬৬ জনসহ মোট ৬৫১ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত আছে। একটি সুসজ্জিত গ্রন্থাগার রয়েছে, যেখানে মোট ৩৯১০টি বই (সংরক্ষিত) আছে। কলেজটিতে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও জীববিজ্ঞান গবেষণা ল্যাব রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে একটি আইসিটি কম্পিউটার ল্যাব এবং শরীরচর্চা বিভাগ, যেখানে বিভিন্ন ধরনের আধুনিক ক্রীড়া সামগ্রী আছে।

শিক্ষক ও কর্মচারীর দিক থেকে কলেজটি বর্তমানে সমৃদ্ধ। এখানে একজন  অধ্যক্ষ, একজন উপাধ্যক্ষ, দুইজন পিএইচডি ডিগ্রিধারী শিক্ষকসহ ১৫ জন সহকারী অধ্যাপক, ২১ জন প্রভাষক, ০১ জন শরীরচর্চা শিক্ষক,একজন গ্রন্থাগার প্রভাষক, একজন সহকারী শিক্ষক (গ্রন্থাগার ও তথ্যবিজ্ঞান), ৩ জন প্রদর্শক এবং ০৩ জন তৃতীয় ও ১৪ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীসহ মোট ৬১ জন শিক্ষক-কর্মচারী কর্মরত আছেন। বর্তমানে কলেজটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক মরহুম সিরাজুল ইসলাম এমপিএ-র  সুযোগ্য পুত্র, জনাব মোঃ জামিউল আরিফ।

কলেজটি ইতোমধ্যেই সাফল্যের সুবর্ণজয়ন্তী পার করেছে। ধারাবাহিক সাফল্যের পথে এগিয়ে গিয়ে এটি বর্তমানে উপজেলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ হিসেবে সগৌরবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। এ বছরও কলেজটি এইচএসসি পর্যায়ে গোদাগাড়ী উপজেলার এমপিওভুক্ত কলেজগুলোর মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেছে।

তথ্যসূত্র:  জনাব সালমান হোসাইন চৌধুরী, প্রভাষক, প্রেমতলী ডিগ্রি কলেজ, জনাব মাহাতাব উদ্দীন, গ্রন্থাগার প্রভাষক ও জনাব আব্বাস উদ্দীন, উচ্চমান সহকারী কাম- হিসাবরক্ষক, প্রেমতলী ডিগ্রী কলেজ।

Scroll to Top